Breaking News

পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়ায় ভয়াবহ আত্মঘাতী বোমা হামলায় ১৩ সেনা নিহত, আহত ২৯

পাকিস্তানে বোমা হামলা ২০২৪ সালের সবচেয়ে বড় ও মর্মান্তিক সন্ত্রাসী হামলার একটি ঘটেছে খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে। শনিবার, ২৮ জুন দুপুরে উত্তর ওয়াজিরিস্তান জেলার একটি সামরিক বহরে চালানো আত্মঘাতী বোমা হামলায় ১৩ জন সেনা নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন আরও ২৯ জন, যার মধ্যে ১০ জন বেসামরিক নাগরিকও রয়েছেন।

বিস্ফোরণের বিস্তারিত ঘটনা

উত্তর ওয়াজিরিস্তানের এক সরকারি কর্মকর্তা আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা AFP-কে জানান, সেনাবাহিনীর একটি গাড়িবহরের মধ্যে ঢুকে পড়ে একটি বিস্ফোরকবাহী গাড়ি। অল্প সময়ের মধ্যেই ঘটে ভয়াবহ বিস্ফোরণ, যার শব্দ চারপাশে কেঁপে ওঠে। এতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ১৩ সদস্য। আহতদের তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হয়, যেখানে জানা গেছে, আহতদের মধ্যে অন্তত ৪ জন সেনার অবস্থা আশঙ্কাজনক

বিস্ফোরণের অভিঘাতে ঘটনাস্থলের কাছাকাছি থাকা দু’টি আবাসিক বাড়ির ছাদ ধসে পড়ে। এতে ৬ জন শিশু আহত হয়, যাদের মধ্যে দুজনের অবস্থা গুরুতর। শিশুদের চিকিৎসা স্থানীয় হাসপাতালের শিশু বিভাগে চলছে।

হামলার দায় স্বীকার করেছে টিটিপির উপশাখা

এই ভয়াবহ হামলার দায় স্বীকার করেছে তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি)-এর একটি উপশাখা হাফিজ গুল বাহাদুর আর্মড গ্রুপ। তারা একটি বিবৃতি প্রকাশ করে হামলাটি পরিকল্পিতভাবে চালানোর কথা নিশ্চিত করেছে।

খাইবার পাখতুনখোয়া: পাকিস্তানের অশান্ত প্রদেশ

খাইবার পাখতুনখোয়া দীর্ঘদিন ধরেই পাকিস্তানের সবচেয়ে অস্থির ও সন্ত্রাসপ্রবণ এলাকা হিসেবে পরিচিত। এটি মূলত পাকিস্তানপন্থি তালেবান গোষ্ঠী টিটিপি-এর অন্যতম ঘাঁটি অঞ্চল। অপরদিকে, বেলুচিস্তান প্রদেশে সক্রিয় বালোচ লিবারেশন আর্মি (BLA) বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যক্রম পরিচালনা করে। এই দুই গোষ্ঠীরই চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো পাকিস্তানের ভৌগোলিক অখণ্ডতাকে ভাঙন ধরানো এবং আলাদা রাষ্ট্র গঠন করা।

বিশ্লেষকদের মতে, এই অঞ্চলগুলোতে সরকারের নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত দুর্বল এবং সীমান্তবর্তী আফগানিস্তানের তালেবানদের সহযোগিতায় এসব গোষ্ঠী দিন দিন আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে।

পাকিস্তানে সন্ত্রাসবাদ ২০২৪: পরিসংখ্যান ভয়াবহ

২০২১ সালে তালেবান গোষ্ঠী আফগানিস্তানের ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলার সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে ২০২৪ সাল ছিল সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী। দেশটিতে এ বছর ৪৪টি বড় ধরনের সন্ত্রাসী হামলা রেকর্ড করা হয়েছে, যা গত এক দশকের তুলনায় ৪০ শতাংশ বেশি

এই হামলাগুলোর ফলে প্রাণ হারিয়েছে:

পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যৌথ অভিযানে নিহত হয়েছে ৯৩৪ জন সন্ত্রাসী। তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, একের পর এক হামলা প্রমাণ করে সন্ত্রাসবিরোধী কৌশলে বড় ধরনের ঘাটতি রয়েছে এবং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা কাঠামোকে আরও শক্তিশালী করা প্রয়োজন।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ শঙ্কা

পাকিস্তানের এই অবস্থায় আন্তর্জাতিক মহল উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র, চীন, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশ নিরাপত্তা জোরদার এবং সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে পাকিস্তানকে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে।

তবে এই সহায়তা কেবল বাহ্যিক চাপ নয়, বরং পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সীমান্ত নিরাপত্তা নীতির আমূল সংস্কার ছাড়া বাস্তবিক ফলাফল আসবে না বলে বিশ্লেষকরা মন্তব্য করছেন।

উপসংহার

পাকিস্তানে আত্মঘাতী বোমা হামলা ২০২৪ সালে দেশটির জন্য আরেকটি সতর্কবার্তা হিসেবে দেখা যেতে পারে। বিশেষ করে খাইবার পাখতুনখোয়া হামলা সারা বিশ্বে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পাকিস্তানের চ্যালেঞ্জগুলো আরও স্পষ্ট করে তুলেছে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে প্রয়োজন সুসংহত কৌশল, আঞ্চলিক সহযোগিতা এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা।

About Malbina Ruhi

Check Also

যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি পদক্ষেপ: ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় ভয়াবহ হামলা

যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি পদক্ষেপ: ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় ভয়াবহ হামলা

ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ঘিরে দীর্ঘদিনের উত্তেজনার জের ধরে এবার সরাসরি সামরিক পদক্ষেপ নিলো যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *