Breaking News

তিন বছরে পাঁচ লাখ কর্মী নেবে ইতালি, বাংলাদেশিদের জন্য বড় সুযোগ

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্য রাষ্ট্র ইতালি তাদের শ্রমবাজারের ঘাটতি পূরণে নতুন করে বড় ধরনের কর্মী নিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে। ২০২৬ থেকে ২০২৮ সালের মধ্যে দেশটি পাঁচ লাখ নতুন বৈধ বিদেশি কর্মী নেবে, যারা ইউরোপের বাইরের দেশ থেকে আসবে।

এই ঘোষণা শুধু ইতালির অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক প্রয়োজনে নয়, বরং বৈধ অভিবাসনের পথ উন্মুক্ত করার একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে। সোমবার ইতালির মন্ত্রিসভা এক বিবৃতিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

২০২৮ সালের মধ্যে প্রায় পাঁচ লাখ কর্মী নিয়োগ

ইতালির সরকার জানিয়েছে, ২০২৫ সালেই এক লাখ ৬৪ হাজার ৮৫০ জন বিদেশি কর্মীকে কাজের সুযোগ দেওয়া হবে, এবং ২০২৮ সালের মধ্যে মোট নিয়োগ সংখ্যা দাঁড়াবে ৪ লাখ ৯৭ হাজার ৫৫০ জনে। এর ফলে বিদেশি শ্রমিকদের জন্য ইউরোপের দরজায় নতুন করে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

এই কর্মসূচি মূলত কৃষি, নির্মাণ, পরিষেবা, এবং বৃদ্ধদের যত্নসহ বিভিন্ন খাতে শ্রমিকের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

জর্জিয়া মেলোনির সরকার দ্বিতীয় দফায় অভিবাসন খোলা রাখছে

বর্তমান ডানপন্থী সরকারপ্রধান জর্জিয়া মেলোনি, যিনি তিন বছর আগে ইতালির প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন, এটি তার মেয়াদে দ্বিতীয়বারের মতো বৈধ অভিবাসন বাড়ানোর উদ্যোগ। এর আগে ২০২৩ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে ইতালি সাড়ে চার লাখ বিদেশি কর্মীকে ওয়ার্ক পারমিট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল

অনিয়মিত অভিবাসনে কড়াকড়ি, কিন্তু নিয়মিত অভিবাসনে ইতিবাচক অবস্থান

যদিও মেলোনির সরকার অনিয়মিত অভিবাসন নিয়ে কঠোর নীতিমালা গ্রহণ করেছে, তবে নিয়মিত ও আইনগত অভিবাসনপ্রক্রিয়ায় দেশটি বেশ সহনশীল এবং কার্যকর। ভূমধ্যসাগরে অভিবাসীদের উদ্ধারকারী এনজিওগুলোর কার্যক্রম সীমিত করাসহ প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া দ্রুততর করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

তবে মন্ত্রিসভার বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “সামাজিক অংশীদারদের চাহিদা ও পূর্ববর্তী আবেদন পর্যালোচনা করেই নিয়োগকোটা নির্ধারণ করা হয়েছে। মূল লক্ষ্য হলো বাস্তব পরিস্থিতির ভিত্তিতে কর্মী চাহিদা পূরণ করা।”

ইতালিতে জনসংখ্যা হ্রাস, বিদেশিদের প্রয়োজন বাড়ছে

ইউরোপের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি ইতালি বর্তমানে বয়স্ক জনসংখ্যা ও জন্মহারে নাটকীয় পতনের মুখে পড়েছে। ২০২৪ সালে ইতালিতে জন্ম নেওয়া শিশুর তুলনায় মারা গেছেন দুই লাখ ৮১ হাজার বেশি মানুষ। এর ফলে জনসংখ্যা ৩৭ হাজার কমে দাঁড়িয়েছে ৫ কোটি ৮০ লাখ ৯৩ হাজারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জনসংখ্যার ভারসাম্য রক্ষা ও অর্থনীতি সচল রাখতে ২০৫০ সালের মধ্যে ইতালিকে কমপক্ষে ১ কোটি নতুন অভিবাসী দরকার হবে।

বাংলাদেশের জন্য বড় সুযোগ

ইতালির এই ঘোষণা বাংলাদেশিদের জন্য একটি বিশাল সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ ইতোমধ্যে ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাত্তেও পিয়ান্তেদোসি মে মাসে ঢাকা সফর করেছেন এবং সেখানে বাংলাদেশের সঙ্গে নিয়মিত অভিবাসন এবং অনিয়মিত অভিবাসন প্রতিরোধে সমঝোতা স্মারক (MoU) সই হয়েছে।

বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে এই সমঝোতা স্মারকে সই করেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। তিনি জানান, “আমরা চাই বৈধ পথে অভিবাসন বাড়াতে। ইতালি সিজনাল এবং নন-সিজনাল দু’ধরনের কর্মী নেবে। আমাদের লক্ষ্য কর্মীদের ভাষা ও কারিগরি দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এই সুযোগ কাজে লাগানো।”

সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, টেকনিক্যাল ট্রেইনিং সেন্টারগুলোর মাধ্যমে ইতালির ভাষা শিক্ষা ও পেশাগত প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে, যাতে আগ্রহী কর্মীরা সঠিকভাবে প্রস্তুতি নিতে পারেন।

আগস্টে বাংলাদেশ সফরে আসছেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী

এই অভিবাসন নীতির অংশ হিসেবে এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারে ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি আগামী আগস্টে বাংলাদেশ সফরে আসবেন বলে সরকারি সূত্র জানিয়েছে। ৩০ আগস্ট ঢাকায় পৌঁছে ১ সেপ্টেম্বর সকালে ফিরে যাওয়ার কথা রয়েছে তার।

ইতোমধ্যে মেলোনির সফরের কথা নিশ্চিত করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পিয়ান্তেদোসি, যিনি তার সফরে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস-এর সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছেন।

তিনি বলেন, “আমরা বাংলাদেশিদের নিয়ে গর্বিত। তারা পরিশ্রমী, তরুণ, এবং ইতালির সমাজে সুন্দরভাবে একীভূত। এ ধরনের অভিবাসী আমাদের আরও দরকার।”

তিনি আরও বলেন, “অনেক বাংলাদেশি এখনো বিপজ্জনক অনিয়মিত পথে ইতালি যাওয়ার চেষ্টা করছেন, যা আমরা নিরুৎসাহিত করছি। আমরা চাই তারা বৈধ পথে আসুক এবং নিরাপদ অভিবাসনের সুযোগ গ্রহণ করুক।”

উপসংহার

ইতালির ওয়ার্ক পারমিট ২০২৬-২০২৮ প্রোগ্রামের মাধ্যমে বাংলাদেশিদের জন্য নতুন দরজা খুলে যেতে পারে, বিশেষ করে যারা আইনি ও নিরাপদ অভিবাসন খুঁজছেন। এখন প্রয়োজন সঠিক প্রস্তুতি, প্রশিক্ষণ, এবং ভাষাজ্ঞান।

এই মুহূর্তে বাংলাদেশের তরুণদের জন্য এটি হতে পারে একটি যুগান্তকারী সুযোগ, যা পরিবার ও দেশের জন্যও আয়োনিক পরিবর্তন আনতে পারে।

About Malbina Ruhi

Check Also

যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি পদক্ষেপ: ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় ভয়াবহ হামলা

যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি পদক্ষেপ: ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় ভয়াবহ হামলা

ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ঘিরে দীর্ঘদিনের উত্তেজনার জের ধরে এবার সরাসরি সামরিক পদক্ষেপ নিলো যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *