বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রায়ই নানা ধরনের কারিগরি ত্রুটি ও প্রশাসনিক দুর্বলতা প্রকাশ পায়। তবে এবারের ঘটনা বেশ চাঞ্চল্যকর ও প্রশ্নবিদ্ধ। জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার শ্রীকর্ণদীঘি উচ্চবিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী দাবি করেছে, সে শুধু একটি বিষয়ে পরীক্ষা দিয়েও ফলাফলে দুই বিষয়ে ফেল করেছে।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী জিৎ চন্দ্র মহন্ত, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ফার্ম মেশিনারি ট্রেড বিভাগের ২০২৪ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন। সে ঐ বছরে ১৪টি বিষয়ের মধ্যে শুধুমাত্র গণিতে ফেল করে। সে অনুযায়ী ২০২৫ সালের পুনঃপরীক্ষায় শুধুমাত্র গণিত বিষয়ে পরীক্ষায় অংশ নেয়।
ফলাফল ঘোষণায় চমক
২০২৫ সালের পুনঃপরীক্ষার ফল প্রকাশ হয় বৃহস্পতিবার (১৩ জুন)। ফলাফল দেখে জিৎ চন্দ্র মহন্ত হতবাক হয়ে যান। তিনি দেখতে পান, শুধু গণিত নয়—ফলাফলে তাকে কৃষি বিষয়েও ফেল দেখানো হয়েছে। অথচ, তার প্রাপ্ত প্রবেশপত্রে কৃষি বিষয়টি অন্তর্ভুক্তই ছিল না।
শিক্ষার্থী জিৎ চন্দ্র মহন্ত গণমাধ্যমকে বলেন, “২০২৪ সালে শুধু গণিতে ফেল করেছিলাম। ২০২৫ সালের পুনঃপরীক্ষায় শুধুই গণিত দিয়েছি। কৃষি তো আমার পরীক্ষার সাবজেক্টই ছিল না। তারপরও কিভাবে আমাকে সেখানে ফেল দেখানো হলো বুঝে উঠতে পারছি না।”
শিক্ষক বললেন—বোর্ডের ত্রুটি
বিদ্যালয়ের কারিগরি শাখার সহকারী শিক্ষক ওমর ফারুক জানান,
“এটা নিছক কারিগরি ত্রুটি বলেই মনে হচ্ছে। বোর্ডের ডেটাবেইসে কোনো ভুল হয়েছে কি না, তা যাচাই করে নম্বরপত্র দেওয়ার সময় এর সমাধান করা যেতে পারে। আমরা জিৎ-এর পক্ষ থেকে বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।”
এদিকে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. রুহুল আমিন বলেন,
“জিৎ-এর ফলাফলের বিষয়টি আমরা শুনেছি এবং বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে বোর্ড কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। কৃষি বিষয়টি তার চতুর্থ বিষয় ছিল বলেই মূল ফলাফলে এর বড় প্রভাব পড়বে না। তবে যদি এটি বোর্ডের ভুল হয়, তবে তা সংশোধন করতে হবে।”
কারিগরি বোর্ডের দৃষ্টিকোণ
এই ঘটনার ফলে স্থানীয় অভিভাবকদের মাঝে বোর্ডের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারিগরি শিক্ষা বোর্ড এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে এই বিষয়ে কোনো বক্তব্য দেয়নি। তবে বোর্ডের কর্মকর্তারা প্রায় সময় বলে থাকেন যে, “সফটওয়্যার জনিত সমস্যায় এমন ভুল হতে পারে।” কিন্তু প্রশ্ন হলো, প্রবেশপত্রে না থাকা কোনো বিষয়ের ফল কিভাবে প্রকাশ হয়?
শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ কী হবে?
এই ধরনের একটি ত্রুটি একজন শিক্ষার্থীর জন্য মানসিকভাবে ধাক্কা ও ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায় ফেলে দিতে পারে। একটি বিষয়েই যেখানে সে দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দিয়েছে, সেখানে অন্য একটি বিষয় ভুলভাবে ফেল দেখানো হলে মোট ফলাফলেও প্রভাব পড়তে পারে। এতে করে সে কলেজে ভর্তির সময় বিভ্রান্তির শিকার হতে পারে।
এ বিষয়ে শিক্ষার্থী জিৎ চন্দ্র মহন্ত বলেন, “আমি চাই বোর্ড আমার সঠিক ফলাফল প্রকাশ করুক। একটি ভুলের কারণে যেন আমার শিক্ষা জীবন থেমে না যায়।”
স্থানীয় অভিভাবকদের প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনাটি প্রকাশ পাওয়ার পর স্থানীয় এলাকাবাসী এবং অভিভাবকদের মধ্যেও অসন্তোষ এবং উদ্বেগ দেখা গেছে। একজন অভিভাবক বলেন, “এই বয়সে ছাত্ররা এমনিতেই মানসিক চাপে থাকে। বোর্ডের এমন ভুল পুরো শিক্ষার্থী ও তার পরিবারের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।”
সমাধান কীভাবে সম্ভব?
শিক্ষাবিদ ও শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমন পরিস্থিতিতে বোর্ড কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই দ্রুত এবং স্বচ্ছভাবে বিষয়টি খতিয়ে দেখে সংশোধন করতে হবে। একইসঙ্গে ভবিষ্যতে এমন ভুল যেন আর না ঘটে, সে বিষয়ে ডিজিটাল সিস্টেমে নিরাপত্তা ও যাচাই প্রক্রিয়া আরও শক্তিশালী করতে হবে।
আরো পড়ুন: “ওড়না কেড়ে নিয়ে হাত বেঁধে ঝুলিয়ে রাখতো, আর বলতো—এখন পর্দা ছুটে গেছে।”
উপসংহার
শিক্ষা ব্যবস্থায় এ ধরনের ভুল প্রশাসনিক ত্রুটির দৃষ্টান্ত হয়ে ওঠে। একজন শিক্ষার্থী যখন নিজের চেষ্টায় পুনরায় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার আশায় বসে, সেখানে ভুল তথ্যের কারণে সে যখন অন্য বিষয়ের ফেল দেখায়—তখন শুধু ফলাফল নয়, পুরো আত্মবিশ্বাস ও ভবিষ্যৎ বিপন্ন হতে পারে।
বোর্ড কর্তৃপক্ষের উচিত হবে—ত্রুটি স্বীকার করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা, যেন একটি সম্ভাবনাময় শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন ব্যাহত না হয়।