গ্যাস্ট্রিক বা পেটের গ্যাসের সমস্যা এখন প্রায় ঘরে ঘরে একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা। ছোট-বড় সবাই এর ভুক্তভোগী। সকালে উঠে হালকা ব্যথা, খালি পেটে জ্বালাভাব, কিংবা খাওয়ার পর পরই অস্বস্তি—এসবই গ্যাসের উপসর্গ। এর প্রধান কারণ অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস, অতিরিক্ত ঝাল-তেল খাওয়া, দেরিতে ঘুমানো, পানিশূন্যতা এবং মানসিক চাপ।
গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা কমাতে অনেকেই ব্যথানাশক বা এন্টাসিডের আশ্রয় নেন, যা দীর্ঘমেয়াদে শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়মিত ওষুধ না খেয়ে যদি কিছু প্রাকৃতিক খাবার খাওয়া যায়, তাহলে এই সমস্যা থেকে সহজেই আরাম পাওয়া সম্ভব। চলুন জেনে নিই সেই উপকারী খাবারগুলোর কথা।
টক দই: প্রাকৃতিক প্রোবায়োটিক হজমের বন্ধু
টক দই শুধু মুখরোচক খাবার নয়, এটি আমাদের হজম ব্যবস্থার জন্য দারুণ উপকারী। টক দইয়ে থাকা প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া পেটের ভাল ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য বজায় রাখে এবং হজমে সহায়তা করে।
কীভাবে খাবেন?
টক দইয়ের সঙ্গে সামান্য জিরার গুঁড়ো, এক চিমটি বিটনুন এবং অল্প পানি মিশিয়ে একটি স্মুদি তৈরি করে নিন। এটি গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা কমাতে মুহূর্তেই কাজ করবে।
মৌরি: পেট ঠান্ডা রাখে, গ্যাস দূর করে
মৌরি এমন একটি প্রাকৃতিক উপাদান, যা পেটের জন্য খুবই উপকারী। এটি অন্ত্রের পেশিকে শিথিল করে, ফলে পেটে জমে থাকা গ্যাস সহজে বেরিয়ে যেতে পারে।
ব্যবহারবিধি:
এক চামচ মৌরি এক গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে রেখে দিন ৬-৮ ঘণ্টা। এরপর সেই পানি সকালে খালি পেটে পান করুন। চাইলে খাবার পরেও এক চিমটি শুকনো মৌরি চিবিয়ে খেতে পারেন।
লবঙ্গ: ক্ষুধা বাড়ায়, গ্যাস কমায়
লবঙ্গের মধ্যে থাকা ইউজেনল নামক উপাদান হজমের রস নিঃসরণে সহায়তা করে। এটি পাকস্থলীর এসিডের ভারসাম্য রক্ষা করে, ফলে গ্যাস জমে না।
কীভাবে খাবেন?
গ্যাসের সমস্যা হলে ২-৩টি লবঙ্গ মুখে নিয়ে চুষে খেতে পারেন। চাইলে এক কাপ গরম পানিতে ২টি লবঙ্গ ফুটিয়ে চা হিসেবেও খাওয়া যেতে পারে।
কলা: প্রাকৃতিক অ্যান্টাসিড
পাকা কলা পেট ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে এবং হজমপ্রক্রিয়াকে সহজ করে। এটি প্রাকৃতিক অ্যান্টাসিড হিসেবে কাজ করে যা পাকস্থলীর জ্বালাভাব কমায়।
উপদেশ:
দিনে এক বা দুইটি পাকা কলা খেলে গ্যাসের সমস্যা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসবে।
আদা: গ্যাস্ট্রিকের ঘরোয়া ওষুধ
আদা দীর্ঘদিন ধরেই প্রাকৃতিক হজমকারী উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এটি পেটে জমে থাকা বাতাস বের করে দেয় এবং হজমে সহায়তা করে।
কীভাবে খাবেন?
এক চা চামচ কুচানো আদা গরম পানিতে ফুটিয়ে আদা-চা বানিয়ে খেতে পারেন। চাইলে এর সঙ্গে সামান্য মধু মেশাতে পারেন স্বাদ বৃদ্ধির জন্য।
সেদ্ধ চালের ভাত বা খিচুড়ি
অনেক সময় ভারী খাবার গ্যাসের সমস্যা বাড়িয়ে দেয়। তবে হালকা খাবার যেমন সেদ্ধ ভাত, খিচুড়ি—পাকস্থলীকে আরাম দেয় এবং হজম সহজ করে।
সতর্কতা:
খিচুড়িতে অতিরিক্ত তেল বা মসলা না ব্যবহার করাই ভালো।
বাড়তি পরামর্শ:
- প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে খাওয়া ও ঘুমানো অভ্যাস করুন।
- অতিরিক্ত তেল, মশলা ও ফাস্টফুড থেকে বিরত থাকুন।
- খাওয়ার পর হালকা হাঁটাহাঁটি করুন।
- পর্যাপ্ত পানি পান করুন।
- দুশ্চিন্তা থেকে দূরে থাকুন।
উপসংহার
গ্যাস্ট্রিক বা গ্যাসজনিত ব্যথা নিয়মিত ওষুধে নির্ভর না করে প্রাকৃতিক ও ঘরোয়া উপায়ে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। উপরোক্ত খাবারগুলো নিয়মিত খেলে গ্যাসের সমস্যা অনেকটাই কমে যাবে। তবে সমস্যা যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।