ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হামলার ঘটনায় উত্তাল হয়ে উঠেছে গোটা মধ্যপ্রাচ্য।
যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপকে সরাসরি ‘যুদ্ধের সূচনা‘ হিসেবে উল্লেখ করেছে ইয়েমেনের ইরান-সমর্থিত বিদ্রোহী গোষ্ঠী হুতি। হামলার পরপরই হুতি গোষ্ঠী কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়ে একে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার বিরুদ্ধে স্পষ্ট হুমকি বলেও মন্তব্য করেছে।
হুতিদের প্রতিক্রিয়া
আল-জাজিরার এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, হুতিদের রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য মোহাম্মদ আল-ফারাহ এক বিবৃতিতে বলেন:
“ট্রাম্প প্রশাসন দ্রুত যুদ্ধ শুরু করতে চায় এবং দ্রুতই এর সমাপ্তি চায়। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। যেখানে-সেখানে পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানো কোনো যুদ্ধের সমাপ্তি নয়—এটা কেবল যুদ্ধের সূচনা।”
তিনি আরও যোগ করেন,
“আঘাত করে পালিয়ে যাওয়ার সময় এখন শেষ। যদি এই আগ্রাসন অব্যাহত থাকে, তার ফলাফল হবে ভয়াবহ।”
হুমকি: মার্কিন জাহাজ নয় নিরাপদ
এই ঘটনার আগে হুতি গোষ্ঠী হুঁশিয়ারি দিয়েছিল, যদি যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ইরানে হামলা চালায়, তাহলে তারা লোহিত সাগরে অবস্থানরত মার্কিন যুদ্ধজাহাজে পাল্টা হামলা চালাবে। হুতিদের এই হুমকি এখন আগের চেয়েও বাস্তব হয়ে উঠেছে।
ট্রাম্পের ঘোষণা: হামলা সফলভাবে সম্পন্ন
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেই নিশ্চিত করেছেন যে, মার্কিন সামরিক বাহিনী ইরানের তিনটি পরমাণু স্থাপনায়—ফোরদো, নাতাঞ্জ এবং ইসফাহান—সফলভাবে হামলা চালিয়েছে। তিনি বলেন:
“সব বিমান ইরানের আকাশসীমা থেকে সফলভাবে ফিরে এসেছে। এই অভিযান ছিল অত্যন্ত কার্যকর।”
ট্রাম্প নিজের মালিকানাধীন সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে আরও দাবি করেন,
“ফোরদো স্থাপনায় একটি পূর্ণ পেলোড ফেলা হয়েছে এবং এটি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে।”
তিনি একটি ওপেন-সোর্স গোয়েন্দা অ্যাকাউন্টের পোস্টও শেয়ার করেন, যেখানে বলা হয়, ফোরদো একটি ‘সুরক্ষিত পারমাণবিক কেন্দ্র’ হলেও তা এখন সম্পূর্ণ ধ্বংসপ্রাপ্ত।
আঞ্চলিক উত্তেজনা চরমে
মার্কিন এই আগ্রাসনের পর হুতি বিদ্রোহীরা, লেবাননের হিজবুল্লাহ, ইরাকের শিয়া মিলিশিয়ারা—সবাই সরব হয়ে উঠেছে।
বিভিন্ন বিশ্লেষক বলছেন, এই হামলা হয়তো ইরানের সঙ্গে শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, বরং পুরো মিত্রশক্তির এক বিপজ্জনক যুদ্ধের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। একে একে আঞ্চলিক খেলোয়াড়রা জড়িয়ে পড়তে পারে এই সংঘাতে, যার ফলে গোটা মধ্যপ্রাচ্য ভয়ঙ্কর বিশৃঙ্খলার মুখোমুখি হতে পারে।
উপসংহার
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলা বিশ্ব রাজনীতিতে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে হুতিদের হুমকি এবং পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর প্রতিক্রিয়া স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দিচ্ছে—এটি শুধুমাত্র একটি প্রতিক্রিয়াশীল সামরিক পদক্ষেপ নয়, বরং আন্তর্জাতিক যুদ্ধাবস্থার সূচনা হতে পারে।