Breaking News

“কাশিম বশির” মিসাইল হতে পারে ইসরায়েলের নতুন মাথাব্যথার কারণ

মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনার আগুনে ঘি ঢেলেছে ইরানের সামরিক প্রযুক্তির সর্বশেষ সংযোজন ‘কাশিম বশির’ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। ইরান এই নতুন প্রজন্মের মিসাইলকে তাদের সামরিক শক্তির এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে ঘোষণা করেছিল মাত্র এক মাস আগে।

আর এখন ধারণা করা হচ্ছে, ইসরায়েলের রাজধানী তেল আভিভে সাম্প্রতিক ইরানি হামলায় এই মিসাইলই ব্যবহৃত হয়েছে।

এই তথ্য উঠে এসেছে আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের রিপোর্ট এবং ইকোনোমিক টাইমস–সহ একাধিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে। বলা হচ্ছে, ইরানের এই নতুন মিসাইল প্রযুক্তি ভবিষ্যতে ইসরায়েল তথা পশ্চিমা জোটের জন্য গুরুতর হুমকির কারণ হয়ে উঠতে পারে।

কাশিম বশির: নামেই ভীতি, ক্ষমতায় ভয়ঙ্কর

‘কাশিম বশির’ হল ইরানের হজ কাসিম ক্ষেপণাস্ত্রের উন্নত সংস্করণ, যার নামকরণ করা হয়েছে কুখ্যাত জেনারেল কাসেম সোলেইমানি-এর স্মরণে। ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন হামলায় নিহত হওয়া এই সামরিক কমান্ডার ছিলেন ইরানের বৈদেশিক সামরিক অভিযানের প্রধান রূপকার।

২০২৫ সালের মে মাসে ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী আজিজ নাসিরজাদে এই মিসাইলটি আনুষ্ঠানিকভাবে ইসলামিক রেভলিউশনারি গার্ডস অ্যারোস্পেস ফোর্স-এর হাতে তুলে দেন। সেসময় তিনি দৃঢ়ভাবে বলেন,

“কাশিম বশির ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করার ক্ষমতা রাখে এবং আমাদের শত্রুদের জন্য এটি হতে যাচ্ছে এক বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ।”

প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্য: কাশিম বশির কেন আলাদা?

কাশিম বশির ব্যালিস্টিক মিসাইলের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য এর উন্নত গঠন এবং শক্তিশালী প্রযুক্তি। এর মধ্যে অন্যতম বৈশিষ্ট্যগুলো হলো:

  • দুই স্তরের ভারি মোটর: যা মাত্র কয়েক মিনিটেই উৎক্ষেপণের জন্য প্রস্তুত হতে পারে। এর মাধ্যমে মিসাইলটি দ্রুতগতিতে নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে পৌঁছাতে পারে।
  • দীর্ঘ পাল্লা: প্রায় ১,৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত আঘাত হানতে সক্ষম। অর্থাৎ, ইরান থেকে সরাসরি ইসরায়েলের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক এবং বেসামরিক স্থাপনায় হামলা সম্ভব।
  • উন্নত নির্দেশনা ব্যবস্থা: এতে রয়েছে আধুনিক ইলেক্ট্রো-অপটিক্যাল ইনফ্রারেড সিকার, যা জিপিএস ছাড়াও টার্গেট শনাক্ত করতে সক্ষম। বিশেষ করে যুদ্ধক্ষেত্রের টার্মিনাল ফেজে এটি সুনির্দিষ্ট আঘাত হানতে পারে।
  • MaRV (Maneuverable Re-entry Vehicle) ডিজাইন: এই ডিজাইন মিসাইলকে প্রতিপক্ষের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমকে ফাঁকি দিতে সাহায্য করে, যার ফলে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এটি শনাক্ত ও বাধা দিতে ব্যর্থ হতে পারে।

ইসরায়েলের জন্য বার্তা: যুদ্ধের মাঠে নতুন হিসাব-নিকাশ

কাশিম বশির ক্ষেপণাস্ত্রকে কেন্দ্র করে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনীতিতে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা দপ্তর এখন এই মিসাইলকে ‘স্ট্র্যাটেজিক হুমকি’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই মিসাইল ব্যবহারের মাধ্যমে ইরান কেবল তার প্রতিশোধ নীতিকেই কার্যকর করছে না, বরং এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক বার্তাও পাঠাচ্ছে ইসরায়েল ও তার মিত্রদের উদ্দেশ্যে। এটি বোঝায়, এখন ইরান শুধু কথার লড়াইয়ে নেই—তারা সামরিক শক্তির ক্ষেত্রেও নিজেদের প্রভাব দেখাতে প্রস্তুত।

মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা পরিস্থিতির ভবিষ্যৎ কী?

কাশিম বশির মিসাইলের বাস্তব অভিযানে ব্যবহার ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার যুদ্ধের সম্ভাবনাকে আরও প্রকট করে তুলেছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই নতুন প্রজন্মের অস্ত্রের উপস্থিতি শুধু ইসরায়েল নয়, বরং গোটা মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা ব্যুহকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে।

ইরান যদি ধারাবাহিকভাবে এ ধরনের প্রযুক্তি আরও বিস্তৃত করে এবং সিরিয়া, লেবানন কিংবা ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের হাতে সরবরাহ করে, তাহলে যুদ্ধক্ষেত্রে ইসরায়েলের জন্য পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে।

উপসংহার

কাশিম বশির ক্ষেপণাস্ত্র এখন আর শুধু একটি সামরিক প্রদর্শনী নয়—এটি ইসরায়েলের জন্য বাস্তবিক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই মিসাইলের সাফল্য ইরানের সামরিক সক্ষমতার প্রমাণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে এবং এটি মধ্যপ্রাচ্যের ভৌগোলিক রাজনীতিতে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

ইসরায়েল কি পারবে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে? না কি কাশিম বশিরের আঘাতে তাদের প্রতিরক্ষা ব্যুহে ফাটল ধরবে—তা সময়ই বলে দেবে।

About Malbina Ruhi

Check Also

মার্কিন হামলা ‘যুদ্ধের সূচনা’ — হুতিদের তীব্র প্রতিক্রিয়া

মার্কিন হামলা ‘যুদ্ধের সূচনা’ — হুতিদের তীব্র প্রতিক্রিয়া

ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হামলার ঘটনায় উত্তাল হয়ে উঠেছে গোটা মধ্যপ্রাচ্য। যুক্তরাষ্ট্রের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *