মধ্যপ্রাচ্যের উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে ইসরাইলে আরও প্রতিশোধমূলক হামলা চালানো হবে বলে সরাসরি হুমকি দিয়েছে ইরান। শনিবার (১৪ জুন) ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ফার্স নিউজ এক জ্যেষ্ঠ ইরানি কর্মকর্তার বরাতে জানিয়েছে, এই সংঘাত এখনই শেষ হচ্ছে না। বরং আরও ভয়াবহ মাত্রায় বিস্তৃত হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই উচ্চপর্যায়ের ইরানি কর্মকর্তা বলেন,
“গত রাতের সীমিত প্রতিক্রিয়া ছিল শুধু একটি বার্তা। এই হামলা আমাদের পক্ষ থেকে শেষ নয়। প্রতিশোধ চলবে এবং এটা হবে আগ্রাসনকারীদের জন্য খুবই বেদনাদায়ক।”
তিনি আরও সতর্ক করে বলেন, “ইসরাইল এ হামলার ফল ভোগ করবে এবং এই আগ্রাসনের জন্য অনুতপ্ত হবে।”
ইসরাইলের হামলা এবং ইরানের পাল্টা জবাব
সাম্প্রতিক এই সংঘাতের সূত্রপাত শুক্রবার ভোররাতে, যখন ইসরাইল ইরানের অভ্যন্তরে কয়েকটি সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়। ইসরাইলি বিমানবাহিনীর এই হামলায় টেহরানসহ বিভিন্ন অঞ্চলে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, ইসরাইলের দাবি অনুযায়ী তারা ‘প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা’ হিসেবে এই অভিযান চালিয়েছে, তবে ইরান একে সরাসরি আগ্রাসন বলেই অভিহিত করেছে।
জবাবে ইরান একযোগে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায় ইসরাইলের বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুর দিকে। এই পাল্টা আঘাতে ইসরাইলে এখন পর্যন্ত অন্তত তিনজন নিহত এবং অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেশ কিছু ভবন ও স্থাপনা। পুরো দেশজুড়ে চলছে সন্ত্রস্ত পরিবেশ, সাধারণ মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে রাত কাটাচ্ছেন।
ইসরাইলের প্রতিক্রিয়া: হামলা থামবে না
ইসরাইলও থেমে নেই। ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (IDF) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা ইরানের অভ্যন্তরে যে সমস্ত লক্ষ্যবস্তু ইসরাইলের নিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টি করছে, সেগুলোতে লক্ষ্যভেদী হামলা চালিয়ে যাচ্ছে এবং এই অভিযান চলমান থাকবে।
টেলিগ্রামে দেওয়া ওই সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে,
“ইসরাইলের আকাশ প্রতিরক্ষা ও বিমান বাহিনী ইরানের অভ্যন্তরে হুমকিস্বরূপ স্থাপনাগুলোতে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে—ইসরাইলের বিরুদ্ধে যেকোনো হুমকি চিরতরে নির্মূল করা।”
আকাশসীমা ও বিমান চলাচলে বিপর্যয়
ইরান-ইসরাইল এ উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির কারণে দেশজুড়ে বিমান চলাচল স্থবির হয়ে পড়েছে। ইসরাইলের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বেন গুরিয়ন সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। দেশটির পরিবহন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে,
“পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ইসরাইলের আকাশসীমা পুরোপুরি বন্ধ থাকবে। এতে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ উড়োজাহাজ চলাচল সম্পূর্ণভাবে স্থগিত রয়েছে।”
শনিবার সকালেও বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করা সম্ভব হয়নি, যা পরিস্থিতির গুরুতর সংকেত বহন করে। মন্ত্রণালয় আরও জানায়,
“যাত্রীরা আকাশসীমা পুনরায় খোলার কমপক্ষে ছয় ঘণ্টা আগে গণমাধ্যম ও অনলাইনের মাধ্যমে আপডেট পাবেন।”
অবস্থা ক্রমেই জটিল হচ্ছে
উত্তেজনা ক্রমেই তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। ইরান ও ইসরাইল উভয় পক্ষই প্রতিশোধের মনোভাব নিয়ে আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে, যা মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতা ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য গভীর উদ্বেগজনক ইঙ্গিত বহন করছে।
বিশ্লেষকরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, এই টানা প্রতিশোধমূলক হামলা যদি কূটনৈতিকভাবে থামানো না যায়, তাহলে বিষয়টি গড়াতে পারে এক পূর্ণমাত্রার যুদ্ধের দিকে। এতে শুধু দুই দেশই নয়, গোটা অঞ্চল ও বিশ্ব অর্থনীতিও আক্রান্ত হতে পারে।