মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা যখন তুঙ্গে, তখন ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার আশঙ্কায় ইসরাইলে অবস্থানরত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মাইক হাকাবি একরাতে পাঁচবার আশ্রয় নেন বাংকারে। শুক্রবার (১৩ জুন) দিনগত রাতজুড়ে ইরান থেকে চালানো ভয়াবহ হামলায় সমগ্র ইসরাইল আতঙ্কে কাঁপে, আর সেই আতঙ্কের ছোঁয়া লাগে কূটনৈতিক মহলেও।
ঘুমহীন ভয়ের রাত—এক রাষ্ট্রদূতের বর্ণনায়
এক্স (পূর্বের টুইটার)–এ দেওয়া এক পোস্টে রাষ্ট্রদূত হাকাবি লেখেন,
“এটা ছিল সত্যিকার অর্থেই এক কঠিন রাত। পাঁচবার আমাকে বাংকারে আশ্রয় নিতে হয়েছে। আকাশজুড়ে যখন সাইরেন বেজে উঠছিল, তখন বুকে ছিল এক অজানা শঙ্কা।”
তিনি বলেন, “আজ এখানে শাবাথ (ইহুদি সপ্তাহের সপ্তম এবং শান্তির দিন)। এটা এমন একটি দিন যেখানে আমরা প্রার্থনা করি ও নিরব থাকি। আমরা আশা করছি, রাতের ভয়াবহতা কাটিয়ে আজ আর কোনো হামলা হবে না। তবে গোটা জাতিকে আশ্রয়কেন্দ্রের কাছাকাছি থাকার জন্য সরকারি সতর্কতা অব্যাহত রয়েছে।”
হামলার প্রেক্ষাপট: পরমাণু স্থাপনায় ইসরাইলের আগ্রাসনের জবাব
ইরান দাবি করেছে, ইসরাইল তাদের পরমাণু গবেষণা ও সামরিক স্থাপনায় আগ্রাসন চালিয়েছে, যার জবাবে তারা শত শত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায়।
এসব হামলায় ইসরাইলের বিভিন্ন অংশে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। রাজধানী তেল আবিবসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহরে বহু মানুষ রাত্রিকালীন আশ্রয়কেন্দ্রে রাত কাটান।
রাষ্ট্রদূতের অবস্থান: ইসরাইলের প্রতি অটল সমর্থন
রাষ্ট্রদূত হাকাবি দীর্ঘদিন ধরেই ইসরাইলের একজন কট্টর সমর্থক হিসেবে পরিচিত। সম্প্রতি তিনি বলেন, “পশ্চিম তীর বলে কিছুই নেই। সেটি ইসরাইলের অবিচ্ছেদ্য অংশ।” এ বক্তব্যে তিনি ফিলিস্তিনিদের দাবির বিপরীতে অবস্থান নিয়ে সমালোচিত হলেও ইসরাইলিদের কাছ থেকে প্রশংসা কুড়িয়েছেন।
এই সপ্তাহের শুরুতে হাকাবি ইসরাইলি সংবাদমাধ্যম Walla-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “ইরানের বিরুদ্ধে ইসরাইল যদি হামলা চালায়, তবে তা অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমন্বয় করে হতে হবে। মার্কিন অনুমোদন ছাড়া একতরফাভাবে এ ধরনের হামলা চালানোর সম্ভাবনা খুবই কম।”
তিনি আরও বলেন, “আমি মনে করি না ইসরাইল-আমেরিকার সম্পর্ক এমন জায়গায় গিয়ে ঠেকেছে যে একে অন্যকে না জানিয়ে এতো বড় সামরিক সিদ্ধান্ত নেবে। আমাদের মধ্যে এখনও গভীর আস্থা ও বন্ধুত্ব বিদ্যমান।”
“আমাদের শুধু একজনই সত্যিকারের অংশীদার—ইসরাইল”
রাষ্ট্রদূত হাকাবি আরও বলেন,
“বিশ্বে আমাদের অনেক বন্ধু রয়েছে, মিত্র রয়েছে। তবে আমাদের যদি একজন প্রকৃত অংশীদার থাকে, সেটি হল ইসরাইল।”
“আমরা ইসরাইল ছাড়া আর কোনো দেশের সঙ্গে এই পরিমাণ গোয়েন্দা তথ্য, সামরিক প্রযুক্তি, কৌশলগত ধারণা এবং সাধারণ লক্ষ্য শেয়ার করি না। এর কারণ, আমাদের মধ্যে রয়েছে এক অভিন্ন মূল্যবোধ—ইহুদি-খ্রিস্টান সভ্যতার ঐতিহ্য।”
তিনি যোগ করেন, “এর মানে এই নয় যে আমরা অন্য দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক ভালো রাখি না, তবে ইসরাইলের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক এক ভিন্ন মাত্রার, এক ঐতিহাসিক ও নৈতিক বন্ধন। আমরা একে অপরকে শুধু মিত্র নয়, পরস্পরের অস্তিত্ব রক্ষার অংশীদার হিসেবে দেখি।”
চূড়ান্ত পর্যবেক্ষণ
এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রদূতের এই ধরনের অভিজ্ঞতা ও বক্তব্য শুধু আন্তর্জাতিক মহলে বার্তা দিচ্ছে না, বরং যুক্তরাষ্ট্র-ইসরাইল মিত্রতার গভীরতা এবং ইরান-ইসরাইল উত্তেজনার ভয়াবহতা কতখানি তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান সংকট পরিস্থিতি শুধু আঞ্চলিক নয়, বরং বৈশ্বিক নিরাপত্তার জন্যও এক বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে।