চলমান উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির মধ্যে ইসরাইল সরকার বেন গুরিয়ন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে, যা দেশটির প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে পরিচিত। ইসরাইলের পরিবহন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বিমানবন্দর এবং দেশটির পুরো আকাশসীমা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ থাকবে।
শনিবার (১৪ জুন) বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিমানবন্দর বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে নিরাপত্তা ও সম্ভাব্য হামলার আশঙ্কার কারণে। বর্তমান উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিতে বিমানবন্দরের কার্যক্রম চালু রাখা নিরাপদ নয় বলে মনে করছে কর্তৃপক্ষ।
আকাশসীমা বন্ধ, ওয়েবসাইটও অচল
পরিবহন মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “দেশের আকাশসীমা এবং প্রধান আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলাচল কেন্দ্র বেন গুরিয়ন বিমানবন্দর পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।” শনিবার সকালেও বিমানবন্দরের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট বন্ধ দেখা যায়, কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এতে বোঝা যায়, পরিস্থিতি কতটা জটিল ও অনিশ্চিত।
অতিরিক্তভাবে, মন্ত্রণালয় জানায়, যাত্রীরা যদি ভ্রমণের পরিকল্পনা করে থাকেন তবে ‘আকাশসীমা পুনরায় খোলার কমপক্ষে ছয় ঘণ্টা আগে’ সংবাদমাধ্যম ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তথ্য জানিয়ে দেওয়া হবে। এর আগে দেশটির সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, “সবধরনের যাত্রী ও বাণিজ্যিক ফ্লাইট সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।”
জর্ডান খুলেছে আকাশপথ, কিন্তু দিয়েছে কড়া বার্তা
অন্যদিকে, প্রতিবেশী রাষ্ট্র জর্ডান এরই মধ্যে আকাশপথ পুনরায় চালু করার ঘোষণা দিয়েছে। শনিবার স্থানীয় সময় সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে জর্ডানের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ জানায়, “আকাশসীমা এখন থেকে আবারো উন্মুক্ত থাকবে।” তবে দেশটির পক্ষ থেকে কঠোর অবস্থান জানানো হয়েছে।
জর্ডানের সরকারি মুখপাত্র মোহাম্মদ আল-মোমানি বলেন, “জর্ডানের আকাশ কাউকে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করতে দেওয়া হবে না। আমাদের আকাশপথ ব্যবহার করে কোনো দেশের সংঘাত ছড়ানোর অনুমতি আমরা দেব না।” ইসরাইল-ইরান চলমান উত্তেজনার মধ্যেই জর্ডান একদিন আগেই সাময়িকভাবে ফ্লাইট স্থগিত করেছিল।
ইরানের পাল্টা হামলায় হতাহতের ঘটনা
এই পরিস্থিতির পেছনে মূল কারণ হিসেবে ইসরাইল-ইরান সাম্প্রতিক উত্তেজনাকে চিহ্নিত করা হচ্ছে। ইরানের পাল্টা হামলায় এখন পর্যন্ত ইসরাইলে তিনজন নিহত এবং অন্তত ৮০ জন আহত হয়েছেন। হামলার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অনেক ঘরবাড়ি ও বেসামরিক স্থাপনাও। কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন এবং জরুরি উদ্ধার কার্যক্রম চলছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার ফলে তেল আবিব, হাইফা এবং আশদোদের মতো গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। জনগণকে বাংকারে অবস্থান করতে বলা হয়েছে এবং জরুরি স্বাস্থ্যসেবাগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে সম্ভাব্য পরবর্তী হামলার জন্য।
এই পরিস্থিতি ইঙ্গিত দেয় যে, ইসরাইলের বর্তমান নিরাপত্তা সংকট অত্যন্ত জটিল এবং অনির্দেশ্য। বিমানবন্দর ও আকাশসীমা বন্ধ থাকা মানে শুধুই আন্তর্জাতিক যাত্রীদের বিঘ্ন নয়, বরং এটি ইঙ্গিত দেয় যে পুরো অঞ্চলে একটি বড় পরিসরের নিরাপত্তা সংকট বিরাজ করছে।